পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে। এর জেরে ভাইয়ে ভাইয়ে চলছে ধন্ধ ও মামলা হামলা। বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এলাকায় একাধিক সালিশ বৈঠক বসলেও সম্পত্তির সঠিক তথ্যের অভাবে সমাধা করতে পারিনি স্থানীয়রা। অবশেষে ঘটে যায় মারামারির ঘটনা। এ ঘটনায় ভাইদের মাইরে ও দায়ের কোপে তাহের মিয়া নামের এক ভাই গুরুতর আহত হয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। শনিবার (১৪ মে) দুপুরে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের নলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের ছমির উদ্দিন ব্যাপারীর বাড়ির মৃত হাজী রুছমত আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, হাজী রুছমত আলী ছয় পুত্র ও দুই মেয়ে সন্তান রেখে মৃত্যু বরণ করে। তার মৃত্যুর পর বাবার রেখে যাওয়া পৈত্রিক সম্পত্তি যার যার হিস্যানুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে ভোগদখল করে আসছিলেন ছয় ভাই ও দুই বোন। এরই মধ্যে এক ভাই তাহের মিয়া তার প্রাপ্ত পৈত্রিক সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে মালয়েশিয়াতে চলে যায়। কয়েক বছর পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে এসে আরও কিছু সম্পত্তি বিক্রি করার পর ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে আহত তাহের মিয়ার সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাবার পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করায় আমার ভাই জামান মিয়া, বাচ্চু মিয়া ও তাদের ছেলেরা মিলে আমাকে প্রথমে মারপিট করে এবং এক পর্যায়ে তাদের হাতে থাকা রাম দা দিয়ে আমাকে কোপ মারে। তিনি আরও বলেন, এর আগে তারা আমাকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য পাগল আখ্যা দিয়ে শিকলে বেধে নির্যাতন করেছে। পরে নির্যাতনের এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর কুলিয়ারচর থানা পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। জামান মিয়া তার ভাই তাহের মিয়াকে মারপিট করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরাসহ তার অত্যাচারে বাড়ি-ঘর ও আশপাশের মানুষ অতিষ্ট। সে তার সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে এখন আমাদের কাছে আরও সম্পত্তি পাবে দাবি করছে। তার অযুক্তিক দাবি না মানায় আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করে বাড়ির ফলন, বনজ গাছসহ কলাবাগান কেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। শুধু তাই-না, আরও নানারকম অত্যাচার নির্যাতনও করছে। এ ছাড়াও সে মাদক সেবন করে রাতে বাড়ি ফিরে ঘরের বেড়ায় এবং দরজায় লাটি দিয়ে বেধড়ক বাইরাতে থাকে। প্রায় সময় দা হাতে নিয়ে বাড়ির আশেপাশে বসে থাকে। স্থানীয় সালিশ বিচারও মানে না সে। বর্তমানে তার অত্যাচারে আমরা সহ প্রতিবেশিরাও অতিষ্ট। এ ব্যাপারে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে ধন্ধের বিষয়টি মিমাংসার লক্ষ্যে একাধিকবার সালিশ দরবারে বসেছি কিন্তু তা সুরাহা করতে পারিনি তাদের পৈতৃক সম্পত্তির সঠিক তথ্যের অভাবে। তবে বিষয়টি নিয়ে জামান মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর তাহের মিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। যা তদন্তাধীন। তাহের মিয়া তার ভাইদের কাছে সম্পত্তি পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু সম্পত্তি পেতে পারে। তবে সম্পত্তির সঠিক হিসেব পেলে বলা যেতো। কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, তাহের মিয়ার সাথে অমানবিক আচরণ করছে তার পরিবারের লোকজন। কয়েকদিন আগে তাহের মিয়াকে পাগল আখ্যা দিয়ে শিকলে বেধে রেখেছিল তার ভাইয়েরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবি দেখে থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে উদ্ধার করে থানায় এনে তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি সে পাগল নয়। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।
Leave a Reply