কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে হাফসা আক্তার হারেনা (২৬) ও তার ৫মাস বয়সের শিশু সন্তান আহসান হাবিবকে ধারলো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহত শিশুর লাশ ও গলাকাটা অবস্থায় মাকে জীবিত উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করলে পথেই মৃত্যু হয় ওই গৃহবধুর। শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুন বন্দর নামক এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত হাফসা আক্তার হারেনা ও আহসান হাবিব উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুনবন্দর এলাকার হারুনর রশিদের মেয়ে ও তার নাতি।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, দেড় বছর আগে সদর ইউনিয়নের নতুন বন্দর গ্রামের হারুনর রশিদের মেয়ে হাফসা আক্তার হারেনার সাথে পাশ্ববর্তী শৌলমারী ইউনিয়নের ওকড়াকান্দা গ্রামের মৃত বাহাদুর আলীর ছেলে দিনমজুর সাহেব আলীর সাথে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আহসান হাবিব নামের এক ছেলে সন্তানের জন্ম নেয়। ঈদুল ফিতরের পরদিন স্ত্রী সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে কাজের সন্ধানে টাঙ্গাইল যান সাহেব আলী। অপর দিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে হারেনা তার অসুস্থ্য শিশু সন্তানকে নিয়ে শৌলমারী ইউনিয়নের ওকড়াকান্দা গ্রামের গোলাম শহীদের ছেলে উকিল বাবা জাকির হোসেন ওরফে জফিয়ালের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি রাত্রি যাপন করেন। পরদিন শুক্রবার সকালে ওই উকিল বাবাকে সাথে নিয়ে কুড়িগ্রামে যান হারেনা। ওই দিন বিকেলের পর থেকে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সন্ধান পাননি স্বজনরা। এদিকে শনিবার সকালে বাবার বাড়ির প্রতিবেশি আব্দুর সবুরের বাড়ির পাশের পুকুরের কিনারায় গলাকাটা মূমুর্ষ অবস্থায় মা ও পাশের ধানক্ষেত থেকে শিশু সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মূমুর্ষ হারেনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভাবি খাদিজা আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকেই উকিল বাবা জফিয়ালই বেশির ভাগ সময় হারেনাকে আনা-নেওয়া করতেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে অসুস্থ্য সন্তানের চিকিৎসার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে ওই উকিল বাবার বাড়িতে যান হারেনা। উকিল বাবার প্রতি অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা তিনি (জফিয়াল) ঘটাতে পারে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওই উকিল বাবা জাকির হোসেন ওরফে জফিয়ালের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
জফিয়ালের বাবা গোলাম শহীদ বলেন,‘বৃহস্পতিবার রাতে হারেনা আমাদের বাড়িতে ছিল। সকালে জফিয়ালের সাথে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে যান তারা।’
নিহতের ভাসুর চান মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম খাতুন বলেন,‘শুক্রবার সকালে হারেনা তার বাচ্চার নোংড়া কাপড় বাড়িতে রেখে কুড়িগ্রামের উদ্দ্যেশে যান। সাথে ছিলেন উকিল বাবা জফিয়াল ও তার স্ত্রী। পরে বিকেলে বাড়িতে এসে ওই নোংড়া কাপড় নিয়ে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যান হারেনা।’
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক জীবন কুমার সাহা বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় হারেনা নামের ওই নারীর গলার পিছন ও সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক লিটন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ঘটনার কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, ‘খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো চাকু জব্দ করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা
Leave a Reply