স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক
ছেলে কর্তৃক মা'কে গলা কেটে নৃশংস হত্যার ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে আসামী গ্রেফতার এবং মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার।
মামলার বাদী আতর খাঁন ফরিদগঞ্জ থানাধীন রূপসা বাজারের পাশে একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করে। গ্রেফতারকৃত আসামী রাসেল (২৭) বাদীর ছোট ছেলে। সে ফরিদগঞ্জ বাজারের একটি মুদি দোকানে চাকুরী করত বাদী তার স্ত্রী এবং ছোট ছেলে রাসেল'সহ ফরিদগঞ্জ থানাধীন ইছাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। বিগত তিন মাস যাবৎ বাদীর ছোট ছেলে গ্রেফতারকৃত আসামী রাসেল (২৭) উশৃঙ্খল চলাফেরা করত। এতে তার পিতা-মাতা ছেলে রাসেলকে নিষেধ করলে আসামী তার পিতার-মাতার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং মারধর করে। বিষয়টি বাদী আতর খাঁন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আহমেদ রাজনকে অবগত করলে আসামী তার পিতা মাতাকে প্রাণে হত্যা করে ফেলবে বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসতেছিল। অতঃপর বাদী আতর খাঁন গতকাল ২৬/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ভোর ০৫.০০ ঘটিকার সময় বাদীর কর্মস্থল রূপসা মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। তখন আসামী রাসেল ও তার মা ভিকটিম রানু বেগম (৫৭) বাড়িতে ছিল।
গত ২৬/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ দুপুর অনুমান ০২.৪৫ ঘটিকার সময় আসামী রাসেল পিতা আতর খাঁনকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, "আমি মাকে জবাই করে লাশ ঘরে রেখে দিলাম" বলে ফোন কেটে দেয়। বাদী তাৎক্ষণিক মাদ্রাসা হতে তার বসত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে দুপুর অনুমান ০৩.১৫ ঘটিকার সময় বাড়িতে এসে তার বসত ঘরের খাটের উপর তার স্ত্রী ভিকটিম রানু বেগম (৫৭) এর গলা কাটা লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের উপর পড়ে আছে। এ সময় এই বীভৎস দৃশ্য দেখে বাদী বুঝতে পারেন যে, তার ছোট ছেলে রাসেল তার মাকে কাঁচি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বাড়ি থেকে পালিয়েছে এবং সে ডাক চিৎকার দিলে ঐ বাড়িসহ আশপাশের বাড়ির লোকজন এসে উক্ত ঘটনা দেখতে পায়। সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হাজীগঞ্জ সার্কেল জনাব পংকজ কুমার দে, অফিসার ইনচার্জ ফরিদগঞ্জসহ ফরিদগঞ্জ থানার একটি চৌকস টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম রানু বেগম (৫৭) এর লাশ গলা কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় তার বসত ঘরের খাটের উপর থেকে উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে।
এরপর চাঁদপুর জেলার মান্যবর পুলিশ সুপার জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর সার্বিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার একটি চৌকস টিম কৌশলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদগঞ্জ থানাধীন কেরোয়া গ্রাম হতে আসামী রাসেলকে গ্রেফতার করে। আসামী রাসেলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার পিতার দোচালা টিনশেড বসত ঘরের কাঁড়/দরমা হতে আসামী রাসেলের দেখানোমতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা কাঁচি (আল কাঁচি) এবং ঘটনার সময় আসামী কর্তৃক পরিহিত তার রক্তমাখা লুঙ্গি ও শার্ট উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে বাদী থানায় হাজির হয়ে তার ছেলে রাসেল (২৭) এর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করলে এই হত্যা মামলাটি রুজু করেন।
এই ঘটনার পর পরই চাঁদপুর জেলার মান্যবর পুলিশ সুপার জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর সার্বিক দিক-নিদের্শনায় ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে এসআই/মোঃ ইসমাইল হোসেন, এসআই/মোঃ রুবেল ফরাজী, এএসআই/মোঃ নাঈম হোসেন, এএসআই/মোঃ মনিরুল ইসলাম'সহ একটি চৌকস টিমের কর্মতৎপরতায় এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আমরা হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রাপ্তির মাত্র ০৪ (চার) ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এহেন হত্যাকান্ডটির মূল হোতা আসামী রাসেল (২৭) কে গ্রেফতারসহ ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধারসহ আসামীর স্বীকারোক্তি গ্রহন করা হয়।
যথাশ্রীঘ্রই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।