বেলাব(নরসিংদী) প্রতিনিধিঃ
নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার ভাবলা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ ওরফে রুশন আলী। দুদকের অফিস সহাকারী হয়েও যিনি নিজের পরিচয় দিতেন সহকারী পরিচালক । ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে স্বাক্ষর জালের। আর অভিযোগটি করেন ভাবলা হাইস্কুলের সাবেক অফিস সহকারী মো, নুরুল আলম আফ্রাদ। দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লেখা তার সেই অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মোঃ মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ শিক্ষা বোর্ডে দশ লক্ষ দশ হাজার টাকার রশিদ জমা দিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও স্কুল ফান্ডে তিনি মূলত কোনো টাকাই জমা দেননি। অর্থাৎ রশিদ বানিয়েছেন নুরুল আলম আফ্রাদের স্বাক্ষর জাল করে। এরপর দুদক তদন্তে নামে। তদন্তে নামেন সাংবাদিকরাও। এসময় ভাবলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাপ আফ্রাদের কাছে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকগণ জানতে চান স্বাক্ষর জালের অভিযোগ সম্পর্কে। গোলাপ আফ্রাদ তখন জানান, অভিযোগটি সত্য। আরও জানান, মুহাম্মদ মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ সত্যিই স্কুল ফান্ডে কোনো টাকা জমা দেননি। অর্থাৎ দশ লক্ষ দশ হাজার টাকার রশিদগুলো ভুয়া। গোলাপ আফ্রাদের এই স্বাক্ষির ভিত্তিতে দুদক মাহবুবুল হাসান আফ্রাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। আর সাংবাদিকগণ সংবাদ প্রকাশ করেন জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন পোর্টালে। এতে গোলাপ আফ্রাদের উপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন মোঃ মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ এবং তার দুই ভাই বাদল আফ্রাদ ওরফে মিষ্টু ও হুমায়ুন কবির আফ্রাদ ওরফে রজব আলী। তারা বিভিন্ন সময় হুমকি দেন গোলাপ আফ্রাদের পরিবারকে। একবার এই তিন ভাই মিলে আক্রমণ করে গোলাপ আফ্রাদদের পঁয়ত্রিশটি লটকন গাছ কেটে ফেলেন। আর ছুরি নিয়ে মারতে আসেন বাড়িতে। এর কিছুদিন পর অর্থাৎ ২৪/৯/২০২২ খ্রি. তারিখে মাহবুবুল হাসান আফ্রাদের পরোক্ষ উস্কানিতে হুমায়ুন কবির আফ্রাদ দা নিয়ে তাড়া করেন গোলাপ আফ্রাদের বাবা আফতাব উদ্দিন আফ্রাদকে। যার প্রেক্ষিতে জিডি করা হয় থানায়। জিডি নম্বর- ১২৪০। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল ২০২৪ বুধবার সকাল আনুমানিক পৌনে দশটায় হুমায়ুন কবির আফ্রাদ আবারও দা নিয়ে আক্রমণ করেন গোলাপ আফ্রাদের পরিবারের উপর। এসময় সবাই ভয়ে ঘরে ঢুকে গেলে তিনি চড়াও হন গাছপালার উপর। তার দায়ের আঘাতে কাটা পড়ে বেশ কিছু ফলবান কলাগাছ এবং লটকন গাছ। এসময় পাশেই ছিলেন বাদল আফ্রাদ। তিনি হুমায়ুন কবির আফ্রাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা না দিয়ে বরং উস্কানি দেন। এতে হুমায়ুন কবির আফ্রাদ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং দা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন গোলাপ আফ্রাদদের উঠানে। ভীত-সন্ত্রস্ত গোলাপ আফ্রাদ তখন ফোন করেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইব্রাহীম হোসেন খোকাকে। নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তিনি তার কাছে সহায়তা চান। কিন্তু তিনি সহায়তা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পুলিশের সাহায্য নিতে পরামর্শ দেন। এরপর থানায় ফোন করলে পুলিশ আসে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। ততক্ষণে হুমায়ুন কবির আফ্রাদ ও বাদল আফ্রাদ সটকে পড়েন। এরপর বক্তব্য গ্রহণের জন্য একাধিকবার তাদের বাড়িতে গেলেও তাদের সাক্ষাৎ মেলেনি। গোলাপ আফ্রাদের পরিবারের অভিযোগ, এর আগেরবারের মতো এবারের আক্রমণটাও মাহবুবুল হাসান আফ্রাদের উস্কানিতেই হয়েছে। তাই থানায় আবার জিডি করা হয়েছে। জিডি নম্বর- ১০৭৮। এবিষয়ে কথা বলার জন্য হুমায়ুন কবির আফ্রাদ ওরফে রজব আলীকে ফোন করলে তিনি বলেন- গোলাপ আফ্রাদের বাবা আমাদের কলার ছড়ি কেটেছে, তাই আমি গাছ কেটেছি। এরপর তার অন্যান্যবারের আক্রমণ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আর ভুক্তভোগী গোলাপ আফ্রাদ বলেন- ‘মাহবুবুল হাসান আফ্রাদের বিরুদ্ধে ওঠা স্বাক্ষর জালের অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি যে সাক্ষ্য দিয়েছিলাম, সেটি তার বিপক্ষে গিয়েছিল। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার এবং আমার পরিবারের জন্য। যে কারণে আমরা একের পর এক আক্রমণের শিকার হচ্ছি। যদি এসব অন্যায়ের বিচার না হয়, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে মানুষ সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ভয় পাবে।’ উল্লেখ্য, হুমায়ুন কবির আফ্রাদ ওরফে রজব আলী কৈশোর থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। একবার তিনি দোকানের খুঁটি দিয়ে বাড়ি মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন ভাবলা গাজীবাড়ির নুরু গাজীর ছেলে আলিম গাজীর।
Leave a Reply